Breaking

Tuesday, June 6, 2023

ফরিদপুরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও সন্তানের সংবাদ সম্মেলন

 

ফরিদপুরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও সন্তানের সংবাদ সম্মেলন
ফরিদপুরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে স্ত্রী ও সন্তানের সংবাদ সম্মেলন


নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি:


ফরিদপুরে গত দেড় বছর যাবত নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কন্যা। নিখোঁজ বিকাশ কুমার সাহা (৪৩) একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। তিনি জেলা সদরের শিবরামপুরের চাদপুর গ্রামের মৃত সুভাষ কুমার সাহার পুত্র। তিনি ফরিদপুর শহরের র‌্যাফেলস ইন হোটেল ভবনে নিউ ঢাকা ড্রাগস এবং রাজধানীর মিডফোর্ড বাবুবাজারের বিল্লাল শাহ মেডিসিন টাওয়ারে বিশ্ব বিকাশ ড্রাগ হাউস নামক প্রতিষ্ঠানের ঔষধ ব্যবসায়ী ছিলেন।


এ ঘটনায় স্বামীকে ফিরে পেতে ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী রিতা রানী সাহা (৩০)।


 মঙ্গলবার (০৬ জুন) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের শামসুদ্দিন মোল্যা হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তার চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মৌমিতা রানী সাহা ও স্বামীর বড় ভাই সুশান্ত কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন।  


সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন- তার স্বামীর নামে ফরিদপুর শহরের র‌্যাফেলস ইন হোটেলের নিচ তলার ২১, ২২ ও ২৩ নং দোকান এবং ঢাকার মিডফোর্ড বাবুবাজার এলাকায় বিল্লাল শাহ মেডিসিন টাওয়ারে একটি ঔষধের দোকানঘর রয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে দোকানগুলো দখলে নিতে তার ব্যবসায়ীক সহপাঠী চক্র পাওনা টাকার মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। এই চক্রের মধ্যে রয়েছে- র‌্যাফেলস ইন হোটেল ভবনের ব্যবসায়ী ও শহরের চরকমলাপুর এলাকার মোঃ দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রাসেল হোসেন, পূর্ব খাবাসপুর এলাকার মৃত আব্দুল হাইয়ের পুত্র কামরুল হোসেন, টেপাখোলা এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার পুত্র মনিরুজ্জামান টুটুল।


লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- আমার স্বামী যাদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন, তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যাংকিং লেনদেন করতেন। সে সকল ব্যবসায়ীরা আমার স্বামীর সরলতার সুযোগে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অস্বীকার করেন। যে কারনে আমার স্বামীর ফরিদপুরে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। আমার স্বামী ব্যবসায়ীদের দেয়া টাকা ফেরত চাইতে গেলে ভাড়াটিয়া সহ কয়েকজন মুঠোফোনে এবং সামনা-সামনি হুমকি দেয় যে, খুন করে গুম করে ফেলবো। এরপর তারা গত ২০১৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমার স্বামীকে অপহরণ করে এবং ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে আমার স্বামীর জীবন রক্ষায় টাকা দেই। 


এছাড়া ঢাকার দোকানঘরটি মনিরুল ইসলাম মনির নামে একজনকে ভাড়া দেয়া হয়। ভাড়া চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলে সে জোড়পূর্বক দখল করে রাখে। এ ঘটনায় আমার স্বামী বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় আমার স্বামীর দোকানঘর দখলদার জিকরা ড্রাগ হাউসের মনিরুল ইসলাম মনির ও সুরেশ্বরী মেডিসিন প্লাজার বিনোদ ড্রাগ হাউসের বীরেশ চন্দ্র পোদ্দারকে আসামী করা হয়।  


মামলা দায়েরের পর থেকেই আমার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দিয়ে আসতো। এরপর ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর আমার স্বামী ঢাকায় গিয়ে নিখোঁজ হয়। 

আজও আমার স্বামীর কোনো সন্ধান পাইনি। 


এই সুযোগে ফরিদপুর র‌্যাফেলস হোটেল ভবনের কয়েকজন ব্যবসায়ী চক্র আমার স্বামীর কাছে টাকা পাবে বলে দাবি করে আসছেন এবং দোকানঘর দখলের পায়তারা করে আসছে। এরমধ্যে আমার স্বামীর স্বাক্ষর জাল করে একটি স্ট্যাম্প তৈরি করে রাসেল হোসেন ও কামরুল হোসেন বাদী হয়ে আমাকে সহ আমার স্বামী ও আমার স্বামীর বড় ভাই শুশান্ত কুমার সাহার নামে কোর্টে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা করেন। এই মামলায় আমি ৪দিন জেলও খেটেছি। এছাড়া র‌্যাফেলস ইন হোটেল ভবনের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানের স্ত্রী আনারকলি, খন্দকার মাশুক, নওশাদ হোসেন, শামীম হোসেন, সবুজ ও পলাশ পৃথকভাবে আমার স্বামীর নামে চেক জালিয়াতির মামলা করেছে। এমনকি ২২নং দোকানটি রাসেল হোসেন নিজের দোকান বলে দাবি করে আসছেন এবং নিউ ড্রাগস ঢাকা প্রতিষ্ঠানটি রাবেয়া খানম নামে একজন দখল করার পায়তারা করতেছে। বর্তমানে তারা আমাকে ফোন দিয়ে এবং বাসায় এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতেছে। আমাকে এবং আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।


এ সময় তিনি বলেন- আমাদের একটি সুখের সংসার ছিলো। স্বামীর ব্যবসায়ীক সুবাদে গত ১০ বছর যাবৎ ফরিদপুর শহরের রথখোলা এলাকার সিংপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতাম। স্বামী নিখোঁজের পর গত ১০ মাস আগে আমার একমাত্র মেয়ে সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ছাত্রী মমিতাকে নিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছি। এরপর আমার মেয়েকে চাদপুর জমেলা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি। তারপরও আমাদের বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে চক্রটি। এমনকি আমার ভাসুরকে (স্বামীর বড় ভাই) প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে চক্রটি। আমি ফরিদপুর প্রশাসনের কাছে আকুতি জানাচ্ছি যে- আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই এবং এই চক্রের হাত থেকে মুক্তি চাই।


এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর শিশু সন্তান মৌমিতা সাহা, স্বামীর বড় ভাই নন্দ সাহা সহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।




No comments:

Post a Comment