Breaking

Wednesday, July 24, 2019

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

এএফ ডেস্ক/ফরিদপুর-
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় সোমবার পদ্মা নদীর পানি ৯ সে.মি. কমে বিপদসীমার ৫৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার পানিবন্দি প্রায় ২ হাজার পরিবারের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে বন্যা দুর্গতরা জানিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে চরাঞ্চলের বানভাসিরা কর্মহীন অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটালেও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান মেম্বার কোনো খোঁজ খবর রাখে নাই বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্যার্তরা। তবে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আল-সাঈদ বলেন, “ সোমবার উপজেলা পদ্মা নদী ঘেষে চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নে ২শ’ বানভাসি পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী (শুকনা খাবার) বিতরন করা হয়েছে”। 

বন্যা দুর্গতরা জানান, বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজনের তুলতায় অপ্রতূল থাকায় বানভাসি পরিবারের অনেকেই ত্রাণ সামগ্রী পায় নাই। উপজেলায় বন্যার্ত পরিবার রয়েছে প্রায় দুই হাজার। আর এ পর্যন্ত সরকারিভাবে সামান্য শুকনা খাবার পৌছানো হয়েছে মাত্র ২৪০ পরিবারে। বেসরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী এখন পর্যন্ত উপজেলার বন্যার্তদের মাঝে বিতরন করা হয় নাই। ফলে বানভাসিদের হৃদয়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে। উপজেলা চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের চর কল্যানপুর মৌজার বানভাসি আনোয়ার বরকন্তাজ (৭০) হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলেন, “ সাতদিন ধরে জলজ প্রানীর মতো পানির মধ্যে আটক অবস্থায় বসবাস করছি। কোথায় আমাদের নেতারা! কেউতো একবার আমাদের দেখতেও এলোনা। ঘরে, দুয়ারে, উঠানে পানি আর পানি। চতুরদিকে পদ্মা নদী। মাঝখানে পানির মধ্যে না খেয়ে বীনা চিকিৎসায় আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরছি। ক’দিন আগেও যারা ভোটের জন্য বাড়ী ছাড়ে নাই, তারা আজ কোথায় বলে সে অঝরে কেঁদে ফেলেন”। আরেক বানভাসি শেখ নুর মোহাম্মাদ (৪৫) বলেন, ঘরের মধ্যে পানি, প্রচন্ড তাপদাহর মধ্যে পরিবারের সবাই অসুস্থ রয়েছে। ঔষধতো দুরের কথা মুখের আহারই পাচ্ছি না। দিনরাত বন্যার পাানিতে ভেসে আসা বিষধর সাপের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে”।
জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের হাজীডাঙ্গী গ্রাম, কামার ডাঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, বালিয়া ডাঙ্গী, ফাজেলখার ডাঙ্গী, এমপি ডাঙ্গী টিলারচর গ্রামের প্রায় ৩৫০ পরিবার, গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রাম, মধু ফকিরের ডাঙ্গী গ্রামে, বেপারী ডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ বাজার, জয়দেব সরকার ডাঙ্গী, চর হোসেনপুর, বদ্দী ডাঙ্গী, রমেশ বালার ডাঙ্গী, মাঝি ডাঙ্গী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬শ’ পরিবার, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের ছাহের মোল্যার ডাঙ্গী গ্রাম, শহর মোল্যার ডাঙ্গী, রেজু চৌকদার ডাঙ্গী, উত্তর নবাবগঞ্জ ও চৌধুরী ডাঙ্গী গ্রাম ছাড়াও চরাঞ্চলের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্তত: ৫শ’ পরিবার, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখার ডাঙ্গী গ্রাম, ছমির বেপারীর ডাঙ্গী, ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী, বিশ্বাস ডাঙ্গী, আমিন খার ডাঙ্গী গ্রামের প্রায় ৫৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পদ্মা পারের বন্যা দুর্গত ওইসব এলাকার অন্ততঃ ৫০ কি.মি. কাঁচা রাস্তা, ৫ কি.মি. ইটের রাস্তা সহ বেশ কয়েকটি কালভার্ট বন্যা বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বানভাসিরা নৌকা বা ট্রলার ছাড়া চলাচল করতে পারছে না। এ ছাড়া বন্যার্ত গরু ছাগল হাঁস মুরগী নিয়ে আরও বিপাকে আছেন পানিবন্দি পরিবারগুলো। 
স্থানীয় সূত্র জানায় প্রচন্ড খড়োতাপের মধ্যে বন্যার বেশ ক’দিন ধরে অবস্থান করার ফলে দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ বালাই বাড়ছে। বিশেষ করে বন্যার্ত শিশু কিশোর ও বৃদ্ধরা বেশী রোগাক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা যায়। সোমবার গাজীরটেক ইউনিয়নের রমেশ বালার ডাঙ্গী গ্রামের পানিবন্দি আদুরী বেগম জানায়, “ এলাকা শুকনা থাকতে স্বাস্থ্য কর্মীরা মাঝে মধ্যে বাড়ী বাড়ী এসে আমাদের খোজখবর নিতো। কিন্তু বন্যা শুরু হওয়ার পর রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় কোনো স্বাস্থ্য কর্মী পানিবন্দি পরিবারে একদিনের জন্যও খবর নিতে আসেনি”। এ ব্যাপারে সোমবার বিকেলে উপজেরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিপ করেন নাই”। 

No comments:

Post a Comment